গ্রহ পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাণঘাতী হচ্ছে - ব্যাকটেরিয়াফেজ | Kurzgesagt

🎁Amazon Prime 📖Kindle Unlimited 🎧Audible Plus 🎵Amazon Music Unlimited 🌿iHerb 💰Binance

ভিডিও

ট্রান্সক্রিপ্ট

[সংগীত]

শত কোটি বছর ধরে একটি যুদ্ধ চলছে,

যাতে প্রতিদিন মারা খাচ্ছে লক্ষ কোটি,

এবং তা আমাদের চোখেই পরছে না.

যারা এই যুদ্ধটি লড়ছে, তারা পৃথিবীর সর্বোৎকৃষ্ট খুনি সত্তা:

“ব্যাকটেরিওফাজ”

সংক্ষেপে ফাজ।

[আবহ সংগীত]

ফাজ হচ্ছে একটি ভাইরাস;

ঠিক জীবিতও নয়,

আবার মৃতও নয়।

আবার দেখে এটাও মনে হয় যেন কেউ এদেরকে বানিয়েছে।

মস্তকখানা তাদের একটা আইকোসাহেড্রন,

ছক্কার মতো, কিন্তু তার ২০ খানা পাশ আর ৩০ খানা কিনারা।

এটা ভাইরাসের জিনগত মাল বহন করে

এবং সচরাচর এটা পদসম তন্তুময় লম্বা লেজের আগায় বসে থাকে।

পৃথিবীর যত রকমের যত প্রাণি আছে তার চেয়ে বেশী ফাজ আছে,

এমনকি ব্যাকটেরিয়ার চেয়েও বেশী।

আর সম্ভবত জীবজগতের সর্বত্রই তারা আছে।

এই মুহূর্তেই আপনার হাতে, অন্ত্রে, অক্ষিপল্লবে শত কোটি ফাজ বিরাজ করছে।

ফাজদেরকে পৃথিবীর সর্বাধিক মৃত্যুর কারণ হিসেবে জেনে আপনি হয়তো এতে ডরাইতে পারেন।

কিন্তু আপনার পেরা নাই

যদিও ব্যাপক হারে হত্যাযজ্ঞ তাদের কাছে প্রাতরাশেরই সামিল,

তারা কেবল ব্যাকটেরিয়াকেই খতম করে।

সমুদ্রের সমুদয় ব্যাকটেরিয়ার অন্তত চল্লিশ শতাংশ প্রতিদিন এদের দ্বারা নিহত হয়।

তবে ফাজেদের মুখ্য গলদও আছে।

অন্য সকল ভাইরাসের মতো, ফাজেরও বেঁচে থাকা ও বংশবৃদ্ধির জন্যে পোষকের প্রয়োজন।

এরা আসলে খোলসাবদ্ধ জিনগত বস্তু ছাড়া কিছুই নয়

তবে তারা বিশেষায়িত।

সাধারণত একটা ফাজ একটা নির্দিষ্ট ব্যাকটেরিয়াকে চিহ্নিত করে রাখে

অথবা কখনো সেটার কতকগুলো নিকটাত্মীয়কেও।

এগুলোকেই সে খেয়ে দেয়।

ফাজেরা যেন একেকটি ক্ষেপণাস্ত্র, যারা কেবল একটা দূর্ভাগা পরিবারকেই কতল করে।

যখন একটি ফাজ তার শিকারকে পায়,

এটা তার লেজের তন্তুগুলো দিয়ে শিকারকে লাগায় আর একরকম সিরিঞ্জ ব্যবহার করে শিকারের গায়ে ছিদ্র তৈরি করে।

এরপর এক বিচিত্র পন্থায়, ফাজ তার লেজকে সংকুচিত করে তার জীনগত তথ্য ব্যাকটেরিয়ার দেহে ভরে দেয়।

কয়েক মিনিটের মধ্যেই ব্যাকটেরিয়াটি হেরে বসে।

এরপর সে নতুন নতুন ফাজ প্রস্তুত করা শুরু করে।

ব্যাকটেরিয়াটা যখন নতুন নতুন ফাজে পরিপূর্ণ হয়ে যায় কেবল তখনই তারা থামে।

সর্বশেষ ধাপে,

তারা এন্ডোলাইসিন উৎপন্ন করে,

এই শক্তিশালী এনজাইম ব্যাকটেরিয়াগাত্রে ছিদ্রের সৃষ্টি করে।

তখন চাপ এতো বেড়ে যায় যে ব্যাকটেরিয়াটা একরকম বমি করে এর অভ্যন্তরস্থ সবকিছু উগড়ে দিয়ে মারা যায়।

নতুন ফাজগুলো মুক্তি পেয়ে আবার এই চক্র শুরু করে।

বিগত কয়েক বছরে,

ব্যাকটেরিওফাজেরা পৃথিবীর দ্বিতীয় মারণাত্মক প্রজাতির নজর কেড়েছে,

তাঁরা হচ্ছে মানুষ।

সম্প্রতি আমরা নিযুত নিযুত ফাজকে আমাদের শরীরে প্রবেশ করিয়ে দেখতে চাচ্ছি।

কারণ আমরা মরিয়া।

আমরা ব্যপারটা কেঁচে ফেলেছি।

অতীতে অল্প একটু কাঁটা-ছেঁড়া কিংবা নোংরা ডোবার এক ঢোক জল আপনার মৃত্যু ডেকে আনতে পারতো।

ব্যাকটেরিয়ারা ছিলো আমাদের ফাজ।

খুদে দানবরা নির্দয়ভাবে আমাদের মারা দিয়ে গেছে।

কিন্তু তারপর প্রায় এক শতাব্দী আগে, আমরা প্রকৃতিতে এক সমাধান খুঁজে পেলাম।

দূর্ঘটনাক্রমে,

আমরা সেই ছত্রাক আবিষ্কার করলাম যার তৈরীকৃত পদার্থ ব্যাকটেরিয়াকে হত্যা করতে পারে।

অ্যান্টিবায়োটিকস।

অকস্মাৎ, আমরা পেয়ে গেলাম কার্যকরী এক অমোঘ অস্ত্র।

অ্যান্টিবায়োটিক এতোই কার্যকর ছিলো যা আমরা ব্যাকটেরিয়াদেরকে আর দানব ভাবতাম না।

কেবল দুর্বল আর বৃদ্ধরাই তাদের দ্বারা মারা যেতেন।

আমরা আরো কম গুরুতর কারণেও আরো বেশী বেশী অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করতাম।

আমরা দানবটার আর এর বিরুদ্ধে আমাদের অস্ত্রটার সম্মান হারিয়ে ফেললাম।

কিন্তু ব্যাকটেরিয়া আর সব জীবের মতোই বিবর্তিত হল আর একে একে আমাদের অস্ত্রসমূহের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ অর্জন করতে লাগলো।

এটা চলতে লাগলো আর আমরা তৈরি করে বসলাম ‘সুপারবাগ’

ব্যাকটেরিয়া, যারা আমাদের সকল অ্যান্টিবায়োটিকের অবধ্য।

ইতোমধ্যে এই প্রতিরোধ সারা পৃথিবীজুড়ে ছড়াচ্ছে।

২০৫০ এর মধ্যে, সুপারবাগেররা বছরে ক্যান্সারের চেয়ে বেশী রোগীর জান কবজ করতে পারে

কাঁটা-ছেঁড়া, মূত্রথলির সংক্রমণ অথবা সর্দি-কাশিতে মরণ বা আপনজন হারাবার দিন ফিরে আসছে।

কেবল যুক্তরাষ্ট্রেই

প্রতিবছর তেইশ সহস্রাধিক মানুষ প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়ার কারণে মারা যায়।

কিন্তু মনে হচ্ছে আমাদের এই খুদে খুনি ভাইরাস ফাজেরা আমাদেরকে বাঁচাতে পারে!

সংক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য আমরা তাদেরকে আমাদের দেহে প্রবেশ করাতে পারি।

কিন্তু সংক্রমিত দেহে লক্ষাধিক ভাইরাস প্রবেশ করানো কীভাবে একটি ভালো বুদ্ধি হতে পারে?

ফাজেরা অত্যন্ত দক্ষ ব্যাকটেরিয়া হন্তারক। এতোই বিশেষায়িত যে,

মানবকূল তাদের থেকে সম্পূর্ণ নিরাপদ। আমরা একেবারেই আলাদা।

প্রতিদিন আমরা কোটি কোটি ফাজেদের সম্মুখীন হই আর নির্বিঘ্নে আমরা পরস্পরের পাশ কাটিয়ে চলে যাই।

আন্টিবায়োটিক গুচ্ছো বোমার মতো সবকিছুকে মেরে ফেলে, এমনকি আমাদের অন্ত্রস্থ প্রয়োজনীয় ব্যাকটেরিয়াদেরকেও।

আর ফাজেরা হচ্ছে নিয়ন্ত্রিত ক্ষেপণাস্ত্রের মতো, তারা কেবল নির্ধারিত ব্যাকটেরিয়াকেই আক্রমণ করে।

কিন্তু আমরা যদি ব্যাকটেরিয়া মারতে ফাজ ব্যবহার করি, ব্যাকটেরিয়ারা কি নিজেদের প্রতিরক্ষার জন্য নতুন পন্থাবলম্বন করবে না?

আসলে ব্যপারটা আরো জটিল, ফাজেরাও বিবর্তিত হয়।

কোটি কোটি বছর ধরে ফাজ আর ব্যাকটেরিয়াদের মধ্যে এই যুদ্ধ চলছে, আর এখন পর্যন্ত ফাজেরাই খেলে দিচ্ছে।

ইহা ফাজেদেরকে উন্নততর অস্ত্রে পরিণত করছে যারা ক্রমশ হয়ে উঠছে আরো উত্তম খুনি।

এমনকি ব্যাকটেরিয়ারা যদি আমাদের ফাজেদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ অর্জন করেও ফেলে,

তাও আমরা জিতে যেতে পারি। দেখা গেছে, কেবল অল্প কয়েকটি ফাজ প্রতিরোধী হবার জন্য

ব্যাকটেরিয়াকে আন্টিবায়োটিকের কাছে আত্মসমর্পণ করতে হবে।

আমরা তাদেরকে ফান্দে পড়িয়া বগা কান্দে অবস্থায় ফেলেও দিতে পারি।

এটা ইতোমধ্যে সফলভাবে এক রোগীকে দিয়ে পরীক্ষা করা হয়ে গিয়েছে, যার আর কোন আশা বাকি ছিলো না।

Pseudomonas Aeruginosa নামের মারাত্মক এক ব্যাকটেরিয়া এই আদমসন্তানের বক্ষে করেছিল সংক্রমণ।

প্রাকৃতিকভাবেই তারা প্রায় সকল অ্যান্টিবায়োটিককেই কাঁচকলা দেখাতে পারে।

এমনকি অ্যালকোহলিক হাতের আঠাও এরা সহ্য করতে পারে

কয়েক বছর ভুগবার পর কয়েক সহস্র ফাজ সরাসরি লোকটার বুকে বিধিয়ে দেয়া হয়

সাথে দেয়া হয় ঐ ব্যাকটেরিয়া নিতে পারে না সেরকম অ্যান্টিবায়োটিক।

কয়েক সপ্তাহ পর, সংক্রমণ পুরোপুরি সেরে যায়!

দূর্ভাগ্যবশত, এই চিকিৎসা পুরোপুরি পরীক্ষামূলক আর ঔষধ প্রস্তুতকারীরা এখনো এমন খাতে টাকা ঢালতে নারাজ

যে চিকিৎসার কোন স্বীকৃতিই এখনো নেই।

তবে দিন বদলাইতেছে।

১২০১৬ সালে ফাজদের নিয়ে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় পরীক্ষামূলক স্বাস্থ্যসেবা শুরু হয়েছে আর তারা আরো বেশী বেশী সাড়াও পাচ্ছে।

আর আমাদের উচিত এতে অভ্যস্থ হওয়া। কারণ এই যুগে অ্যান্টিবায়োটিক আর আমাদের মোক্ষম অস্ত্র নয়।

ওরম মনে হয়, কিন্তু গ্রহের সবচে খুনে সত্তাকে সরাসরি আমাদের দেহে

ভরে দিলে বাঁচতে পারে লক্ষাধিক প্রাণ।

এই ভিডিওর নির্মাণ সম্ভব হয়েছে বিল এন্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের একটি অনুদানে।

আপনারা চাইলে patreon.com/Kurzgesagt -এ গিয়ে কুর্জগেসাত কে সমর্থন যোগাতে পারেন আর পেতে পারেন আকর্ষণীয় প্রতিদান।