ভিডিও
ট্রান্সক্রিপ্ট
আমরা অতিক্রম করতে পারবোনা এমন কোন সীমা আছে কি?
এমন কোন স্থান আছে কি যেখানে আমরা পৌছতে পারবোনা কখনোই? যতই চেষ্টা করি না কেন!
দেখা যাচ্ছে, আছে!
সায়েন্স ফিকশন টেকনোলজি ব্যবহার করলেও আমরা আমাদের সেই গ্রাভিট্যাশনাল পকেট থেকে বের হতে পারবো না।
কেন পারবোনা? কতদূর যেতে পারবো?
আমরা বাস করি মাঝারি সাইজ এর সর্পিল গ্যালাক্সি ‘মিল্কিওয়ে’ এর একটি শান্ত স্কার্ট এ।
যা প্রস্থে ১০০,০০০ আলোকবর্ষ
বিলিয়ন নক্ষত্র, গ্যাসপুঞ্জ, ডার্ক ম্যাটার, ব্ল্যাক হোলস ও নিউট্রন স্টার নিয়ে গঠিত।
সাথে অসংখ্য গ্রহ এবং পুরো গ্যালাক্সির কেন্দ্রে অনেক বিশাল এক ব্ল্যাক হোল।
অনেক দূর থেকে, আমাদের গ্যালাক্সি অনেক ঘন মনে হলেও, এটা মূলত ফাকা স্থান দিয়েই গঠিত।
আমাদের বর্তমান প্রযুক্তির সহায়তায় একজন মানুষকে সবচেয়ে কাছের নক্ষত্রে পাঠাতেও হাজার বছর প্রয়োজন।
সুতরাং, আমাদের গ্যালাক্সি আসলে অনেক বড়।
আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি একা নয়।
সাথে আছে এন্ড্রোমেডা গ্যালাক্সি এবং আরো ৫০টিরো বেশী বামন(dwarf) গ্যালাক্সি।
এ সব-ই লোকাল গ্রুপ এর অন্তর্গত।
যা ১ কোটি আলোকবর্ষ ব্যাসের স্থান নিয়ে অবস্থিত।
এরকম আর শত লোকাল গ্যালাক্সি গ্রুপ নিয়ে গঠিত ‘ল্যানিয়েকা সুপারক্লাস্টার’
যা মিলিয়ন সংখ্যক সুপারক্লাস্টার এর একটি।
যেগুলা সব মিলিয়ে দৃশ্যমান বিশ্ব।
যদি আমাদের ভবিষ্যৎখুব উন্নত হয়
মানবজগত ৩য় স্তরের সভ্যতা (গ্যালাক্টিক সিভিলাইজেশন) এ পৌছায়
এবং এলিয়েন দ্বারা নিশ্চিহ্ন না হয়
এবং আমাদের বর্তমান পদার্থবিজ্ঞান এর জ্ঞান দিয়ে আন্তর্গ্যালাক্টিক অভিযান এ সক্ষম হই
তাহলে সর্বোচ্চ সফল ক্ষেত্রে আমরা কত দূর যেতে পারবো?
উত্তরটা হল, আমাদের লোকাল গ্রুপ এর সীমা পর্যন্ত।
লোকাল গ্রুপ-ই সবচেয়ে বড় অঞ্চল যেটার বেশী মানুষ অধিকার করতে পারবে না কখনোই।
এটাও যদিও নিশ্চিতভাবে অনেক বড়, তারপরো এটি মাত্র ০.০০০,০০০,০০০,০১%
পুরো দৃশ্যমান বিশ্বের।
সংখ্যাটা বোঝার চেষ্টা করি…
আমরা পুরো দৃশ্যমান বিশ্বের ১০,০০০ বিলিয়ন ভাগের এক ভাগের মধ্যে বন্দী।
আমরা সীমা দ্বারা বদ্ধ
এবং মহাবিশ্বে এত কিছু আছে যা স্পর্শের বাইরে, এই ব্যাপারটি ভয়ানক!
কেন আমরা এই সীমার বাইরে যেতে পারবো না?!
এটা আসলে শুন্যতার বৈশিষ্ট্যের কারনে।
শূন্যতা আসলে শূন্য নয়, প্রকৃতিগতভাবেই এর সাথে শক্তি (এনার্জি) জড়িয়ে আছে।
যা কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশন (অস্থিতিশীলতা) নামে পরিচিতি।
ক্ষুদ্র কোয়ান্টাম স্তরে, বিরতিহীন ভাবে কণা (পদার্থ) ও প্রতিকণা (ঋণাত্মক পদার্থ )
তৈরি হয় এবং একে অপরকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়।
এটাকে বুদবুদ ওঠা একটি পাত্রের সাথে তুলনা করা যেতে পারে।
যা ঘন ও ঘনত্বহীন অঞ্চল দ্বারা গঠিত।
এখন ১৩,৮০০ কোটি বছর পিছনে ফিরে দেখা যাক, যখন শুন্যস্থান
সম্পুর্ণ শূন্য ছিল।
ঠিক বিগ ব্যাং এর পর মুহূর্তে, একটা বিশ্বপ্রসারণ ঘটেছিল
দৃশ্যমান বিশ্ব, সেকেন্ডের ভগ্নাংশ সময়ে, মার্বেল এর সাইজ থেকে ১০০,০০০ কোটি কিলোমিটার ব্যাস এর গোলক এ রুপ নেয়
এই আকস্মিক সম্প্রসারণ এত তীব্র ও দ্রুত ঘটেছিল
যে কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশন(কণা তৈরি ও ধ্বংস হওয়া) সম্প্রাসারিত হয়েছিল
অন্তঃপারমাণবিক দূরত্ব আন্তঃগ্যালাক্টিক দূরত্বে পরিণত হয়
যেখানে অল্প ঘন ও অধিক ঘন স্থান ছিল।
এই মহাসম্প্রসারন ঘটার পর, মহাকর্ষ সবকিছুকে আবার টেনে একত্রে আনতে চায়
যেখানে বৃহৎ শুন্যস্থান সেখানে সম্প্রসারন খুব শক্তিশালী ও দ্রুত তাই মহাকর্ষ
এটাকে অতিক্রম করতে পারে না, কিন্তু যেখানে শুন্যস্থান কম, ঘন অঞ্চল এবং কোয়ান্টাম স্তরে মহাকর্ষ জয়ী হয়।
তাই, সময়ের পরিক্রমায়, ঘনতর অঞ্চল যাকে আমরা পকেট (ভারি অঞ্চল) বলি
অনেক গ্যালাক্সি গ্রুপ এ পরিণত হয়, এরকম একটাতে আমরা এখন বসবাস করি।
শুধুমাত্র পকেট এর ভিতরে অর্থাৎ লোকাল গ্যালাক্সি গ্রুপ এর মধ্যে যা আছে তাই মহাকর্ষের জালে আবদ্ধ।
কিন্তু সমস্যাটা কোথায়?
আমরা কেন পকেট এর বাইরে বের হয়ে পাশে পকেটে যেতে পারবো না?
কারন, ডার্ক এনার্জি (কৃষ্ণ/অদৃশ্য শক্তি) বেপারটাকে অসম্ভব করে ফেলেছে।
৬০০কোটি বছর আগে, ডার্ক এনার্জি নিয়ন্ত্রন নিয়ে ফেলে।
ডার্ক এনার্জি হল একটা অদৃশ্য শক্তি বা প্রভাব যা
বিশ্বের সম্প্রসারণ ঘটায় এবং তরান্বিত করে।
আমরা এখনো জানি না কেন তা করে বা এটা আসলে কি! কিন্তু আমরা এটার প্রভাব স্পষ্টত পর্যবেক্ষন করতে পারি।
আদি বিশ্বে, অনেক বড় বড় ঠান্ডা অঞ্চল ছিল লোকাল গ্যালাক্সি গ্রুপ (পকেট) গুলোতে।
যেগুলো পরবর্তিতে সহস্র নক্ষত্রবিশিষ্ট নক্ষত্র পুঞ্জ তে পরিণত হয়
আমাদের (লোকাল গ্রুপ) পকেট এর চারপাশে অসংখ্য গ্রুপ ও গ্যালাক্সি আছে যার কোনটাই
আমাদের সাথে মহাকর্ষ দ্বারা বাধা নয়।
তাই মহাবিশ্ব যতই সম্প্রাসারিত হচ্ছে ততই বাড়ছে
আমাদের সাথে অন্যান্য পকেট (যার নিজের অভ্যন্তরে মহাকর্ষ আছে কিন্তু অন্য পকেট এর সাথে নেই) এর মধ্যবর্তী দূরত্ব
এভাবে, সময়ের সাথে ডার্ক এনার্জি আমাদের পকেট এর বাইরের মহাবিশ্বকে দূরে ঠেলে দিচ্ছে আমাদের থেকে।
যার ফলে অন্যান্য নক্ষত্রপুঞ্জ, নক্ষত্র এবং পকেটকে ক্রমে ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যাচ্ছে।
পাশের পকেট/ গ্যালাক্সি গ্রুপ এখনি মিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে
এবং তারা একে অপর থেকে এত দ্রুত দূরে সরে যাচ্ছে (এবং ত্বরান্বিত হচ্ছে ক্রমে) যে আমরা সেই দ্রুতিতে কখনোই ছুটতে পারবো না।
আমরা হয়তোবা একসময় আমাদের পকেট থেকে বের হয়ে আন্তঃপকেট অন্ধকার স্থানে ছুটতে পারি
কিন্তু আমরা কখনোই কোন কিছুতে পৌছাবনা।
আমাদের জন্য যখন ব্যাপারটা আরো অসম্ভব হচ্ছে তখন লোকাল গ্রুপ/পকেট আরো ঘনীভূত হচ্ছে
যা একীভূত হয়ে একসময় দানবীয়/বৃহৎ উপবৃত্তাকার গ্যালাক্সি তে পরিনত হবে, যাকে আমরা মিল্কড্রোমেডা বলতে পারি।
যার জন্য কয়েকশত কোটি বছর দরকার।
কিন্তু এর চেয়ে বিষাদকর বিষয় হলো…
লোকাল গ্রুপ এর বাইরে সবকিছু আরো অনেক অনেক দূরে চলে যাবে।
যে তাদেরকে চিহ্নিত করা অসম্ভব হয়ে যাবে এবং যে আলোক কনাগুলো সেসব জায়গা থেকে এখনো আমাদের কাছে পৌছায়
তাদের তরঙ্গদৈর্ঘ্য এত বেশী হয়ে যাবে যে তাদেরকেও আর খুঁজে পাওয়া যাবে না।
এরকম হওয়ার পর, আর কোন আলোক কনার মত তথ্যও পকেট এর বাইরে থেকে আমাদের কাছে পৌছাবেনা
মহাবিশ্ব (পকেটের বাইরের) তখন দৃশ্য ও পর্যবেক্ষন এর বাইরে চলে যাবে।
চারপাশের সব দিকে থাকবে শুধু অন্ধকার আর শূন্যতা
সুদূর ভবিষ্যতে আমাদের মিল্কড্রোমেডাতে জন্ম নেয়া কোন বুদ্ধিমান প্রানী
চিন্তা/পর্যবেক্ষন করে তার নিজের গ্যালাক্সির বাইরে মহাবিশ্বের কিছু পাবে না।
তারা যখন গ্যালাক্সির বাইরে তাকাবে, অন্ধকার আর শূন্যতা ছাড়া কিছুই পাবে না।
কসমিক ব্যাকগ্রাউন্ড রেডিয়েশন (দূর নক্ষত্র থেকে আসা রশ্মি) ও থাকবে না।
তারা বিগ ব্যাং সম্পর্কেও কিছু জানতে পারবে না।
আমরা এখন যা পর্যবেক্ষন করি/জানি তার কোন কিছুই তারা জানতে পারবে না।
সম্প্রসারণশীল মহাবিশ্ব, কবে তার সৃষ্টি, কিভাবে তা শেষ হবে সবই তাদের পর্যবেক্ষনের বাইরে চলে যাবে।
তাদের কাছে মহাবিশ্ব হবে শুধুই তাদের গ্যালাক্সি যেটা চিরস্থির ও চিরস্থায়ী।
মিল্কড্রোমেডা একটা অন্ধকার পরিবেষ্টিত দ্বীপ এ পরিণত হবে এবং ধীরে ধীরে আরো অন্ধকারে আচ্ছন্ন হবে।
তারপরও, ১০০,০০০ কোটি নক্ষত্র নিয়ে গঠিত এই লোকাল গ্রুপটি নিঃসন্দেহে
মানুষের জন্য অনেক বড়।
সর্বোপরি, আমরা এখনো নিজেদের সোলার সিস্টেমের বাইরে যাওয়াই শিখিনি
আমাদের হাত এ এখনো শত কোটি বছর আছে নিজেদের গ্যালাক্সি কে অন্বেষণ করার
আমরা খুব-ই সৌভাগ্যবান এমন এক সময় আছি যেখানে থেকে আমরা
সুদূর ভবিষ্যত-ই শুধু দেখতে পাচ্ছি তাই না, সবচেয়ে দূরের অতীত ও দেখতে পাচ্ছি।
আমরা সবচেয়ে বড় এবং দর্শনীয় মহাবিশ্ব দেখতে পাচ্ছি
যেমন টা এখন আছে কিন্তু ভবিষ্যতে দৃশ্যমান হবে না।