আশাবাদী নিহিলিজম | Kurzgesagt

🎁Amazon Prime 📖Kindle Unlimited 🎧Audible Plus 🎵Amazon Music Unlimited 🌿iHerb 💰Binance

ভিডিও

ট্রান্সক্রিপ্ট

মানুষের অস্তিত্ব ভীতিকর ও বিভ্রান্তিকর।

কয়েকশত সহস্র বছর পূর্বে, আমরা চেতনা পাই এবং নিজেদের অদ্ভুত জায়গায় আবিষ্কার করি।

জায়গাটি ছিল অন্য প্রাণীতে ভরা। আমরা অন্যদের খেতাম; অন্য কেউ আমাদের খেতো।

পানের জন্য ছিল তরল পানীয়; নতুন জিনিস তৈরির জন্য ছিল উপকরণ।

দিনের আকাশে ছিল একটি ক্ষুদ্র হলুদ বল, যেটা আমাদের ত্বককে উষ্ণ করতো।

রাতের আকাশটা ছিল মনোরম আলোয় ভরা।

জায়গাটা যেন আমাদের জন্যই বানানো হয়েছে।

উপর থেকে কেউ আমাদের দেখছিল।

আমরা বাড়ি বানালাম। এটা আমাদের ভয় আর দুশ্চিন্তাকে অনেকটা কমিয়ে দিলো।

কিন্তু যতোই বড় হলাম, ততোই বিশ্ব ও নিজেদের সম্পর্কে জানতে পারলাম।

আমরা জানলাম ঝিকমিক করে জ্বলা তারকাগুলো আমাদের জন্য জ্বলছে না, সেগুলো শুধু জ্বলছে।

আমরা জানলাম যে আমরা মহাবিশ্বের কেন্দ্রে নই,

মহাবিশ্ব আমাদের ধারণার চেয়েও অনেক অনেক বেশি প্রাচীন।

আমরা জানলাম যে আমরা অসংখ্য ক্ষুদ্র মৃত বস্তু দিয়ে তৈরি,

সেগুলো মিলে বৃহৎ বস্তুর সৃষ্টি, অজানা কারণে সেটা জীবিত।

বিলিয়ন বছরেরও বেশি সময় ধরে ফিরে যাওয়া ইতিহাসে আমরা অস্থায়ী এক অধ্যায়।

বিস্ময় ভরে জেনেছি, আমরা বাস করি মাঝারি আকৃতির নক্ষত্রের চারপাশে ঘূর্ণনরত আদ্র ধূলির মাঝে,

মাঝারি আকৃতির ছায়াপথের এক বাহুর শান্ত অঞ্চলে, সেটা আবার একগুচ্ছ ছায়াপথের অংশ যা কখনও ছেড়ে যাবো না।

আর এমন হাজারো ছায়াপথ গুচ্ছ মিলে তৈরি হয় সুপারক্লাস্টার।

আমাদের সুপারক্লাস্টারও হাজার হাজার সুপারক্লাস্টারের মধ্যে একটা, যেগুলোকে একত্রে পর্যবেক্ষণযোগ্য মহাবিশ্ব বলি।

মহাবিশ্ব মিলিয়ন গুন বড় হতে পারে, আমরা কখনো জানতে পারবো না।

আমরা দুই মিলিয়ন গ্যালাক্সির ভিতরে সংকেত ছুঁড়ে দিতে পারি

কিংবা ট্রিলিয়ন নক্ষত্র বা বিজালিয়ন গ্রহের মাঝে,

কিন্তু এসব সংখ্যার কোন মানে নেই। আমাদের মস্তিষ্ক এই ধারণাগুলি অনুধাবন করতে পারে না।

আমাদের মহাবিশ্ব অত্যন্ত বিশাল। এর বিশালতাও অনেক বেশি।

কিন্তু আকৃতিই সবচেয়ে বড় সমস্যা নয় আমরা যার সম্মুখীন হই।

এটা হলো সময়, সঠিকভাবে বললে , আমাদের যতটুকু সময় আছে।

যদি তুমি ১০০ বছর বাঁচার মতো ভাগ্যবান হও,

তোমার পরিণতির জন্য ৫২০০ সপ্তাহ পাবে।

যদি তোমার বয়স ২৫ হয়, তোমার হাতে ৩৯০০ সপ্তাহ বাকি আছে।

তুমি যদি ৭০ বছরে মারা যাও, তাহলে ২৩০০ সপ্তাহ বাকি আছে,

প্রচুর সময়, তবুও যেন … যথেষ্ট না।

তার পর কী?

তোমার জৈবিক প্রক্রিয়াগুলি ভেঙে পড়বে,

এবং গতিশীল প্যাটার্ন যেগুলি আসলে তুমি, স্থিতিশীল হয়ে যাবে।

সব বিলীন হয়ে যাবে যতক্ষণ না তোমার কোন কিছু বাকি থাকে।

কেউ বিশ্বাস করে যে আমাদের একটা অংশকে আমরা দেখতে বা পরিমাপ করতে পারি না,

কিন্তু সেটা জানার কোন উপায় নেই, তাই হয়তো এটাই জীবনের পরিণতি,

হয়তো আমাদের মৃত্যু চিরদিনের জন্য।

যদিও শুনতে যতটা ভয়ঙ্কর লাগে আসলে ততটা না,

যদি তুমি জন্মের ১৩.৭৫ বিলিয়ন বছর পূর্বের কথা মনে করতে না পারো,

তুমি চলে যাওয়ার পরও ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন বছর চলে যাবে চোখের নিমিষেই।

চোখ বন্ধ করো। ১ পর্যন্ত গুনো।

পুরো সময়টা এতটুকুই বড় মনে হবে।

যতদূর জেনেছি, সবশেষে মহাবিশ্বেরও মৃত্যু ঘটবে এবং কোন কিছুরই আর পরবর্তন হবে না।

আমাদের ভিডিয়ো অনেকের মাঝে অস্তিত্বের ভয় ঢুকিয়ে দিতে পারে,

শেষ কয়েক মিনিটও হয়তো উপকারে আসেনি।

তাই, একবারের জন্য, পুরো বিষয়টাকে ভিন্ন আঙ্গিকে ভাবতে বলবো:

একটা অবৈজ্ঞানিক, বিষয়ভিত্তিক দৃষ্টিভঙ্গিতে, কুর্জগেসাগটের দর্শন, যদি জানতে চাও।

বিষয়টাকে বালুকণার মতো ভাবো;

মানব অস্তিত্বের ব্যাপারে আমরা তোমার চেয়ে বেশি কিছু জানি না।

আমরা অস্তিত্বের ভয়কে আশাবাদী ধ্বংসবাদ দিয়ে প্রতিস্থাপন করবো।

এই কথা বলে আমরা কী বুঝাচ্ছি?

সংক্ষেপে বললে, এটা খুবই অযৌক্তিক যে ১২০০ ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন নক্ষত্র আমাদের জন্য বানানো হয়েছে।

বলতে গেলে, অস্তিত্বের সবচেয়ে নির্মম তামাশা আমাদের সাথে করা হয়েছে।

আমরা আত্মসচেতন হয়েছিলাম শুধু এটা বুঝার জন্য যে গল্পটা আমাদেরকে নিয়ে নয়।

যদিও ইলেকট্রন ও পাওয়ার হাউজ সম্পর্কে জানাটা অনেক আনন্দের বিষয়।

বিজ্ঞান এই হতাশা কমানোর জন্য বেশি কিছু করেনি।

ঠিক আছে, কিন্তু তাতে কী?

তুমি জীবনে একবারই সুযোগ পাবে, ভয়ানক কথা,

কিন্তু এটা তোমাকে মুক্তির স্বাদও দিবে।

যদি মহাবিশ্বের তাপীয় মৃত্যু ঘটে, তোমার জীবনের সব অপমান তুমি ভুলে যাবে।

তোমার করা সব ভুল পরিশেষে কোন ব্যাপার না।

তোমার করা সব খারাপ কাজ বৃথা হয়ে যাবে।

আমাদের জীবনটা যদি হয় অভিজ্ঞতার সমষ্টি, তাহলে শুধু এটাই গুরুত্বপূর্ণ।

যদি মহাবিশ্বের কোন নীতি না থাকে, তাহলে কেবল আমাদের সিদ্ধান্তগত নীতিই হবে প্রাসঙ্গিক।

যদি মহাবিশ্বের কোন উদ্যেশ্য না থাকে, তাহলে আমরা এর উদ্যেশ্যে নির্দেশ করে দিতে পারি।

মানুষের অস্তিত্ব এক সময় বিলীন হয়ে যাবে,

কিন্তু যাওয়ার আগে, আমরা নিজেদেরকে ও বিশ্বটাকে অন্বেষণ করতে পারি।

আমরা নতুন অনুভূতির অভিজ্ঞতা লাভ করতে পারি।

অভিজ্ঞতা নিতে পারি সুস্বাদু খাবার, বই, সূর্যোদয় এবং একে অপরের পাশে থাকার।

বিষয়গুলি নিয়ে আমরা যেভাবে ভাবতে সক্ষম হয়েছি সেটাতো অসাধারণ।

এটা ভাবা সহজ যে আমরা সবকিছু থেকে আলাদা, কিন্তু এটা সত্য নয়।

নিউট্রন তারার মতো আমরাও এই মহাবিশ্বেরই অংশ

কিংবা একটা ব্ল্যাকহোল বা নেবুলার মতোই।

আরও ভালো, আমরা হলাম এর চিন্তাশীল এবং অনুভূতিশীল অংশ:

মহাবিশ্বের কেন্দ্রীয় অঙ্গ।

আমরা আসলেই এই মহাবিশ্ব-আকৃতির খেলার মাঠে উন্মুক্ত,

তাই আমরা খুশি হওয়ার পাশাপাশি নক্ষত্রমণ্ডলে কল্পরাজ্য বানাতে পারি।

এই জন্যে নয় যে জানার মতো সবকিছুই আমরা জেনে গেছি।

আমরা জানি না মহাবিশ্বের নিয়ম কেন এরকম।

কীভাবে প্রানের অস্তিত্ব এলো, প্রাণ কী।

আমাদের ধারণা নেই চেতনা কী বা মহাবিশ্বে আমরা একা কিনা।

কিন্তু আমরা কিছু উত্তর খোঁজার চেষ্টা করতে পারি।

যাওয়ার জন্য আছে বিলিয়ন বিলিয়ন নক্ষত্র, নিরাময়ের জন্য আছে রোগ-বালাই,

সাহায্য করার জন্য মানুষ, অভিজ্ঞতার জন্য সুখানুভূতি,

এবং শেষ করার জন্য আছে ভিডিও গেমস।

আরও অনেক কিছুই করার আছে।

তো, শেষ করা যাক, তুমি হয়তো তোমার সময়ের বেশ খানিকটা খরচ করেছো।

যদি আমাদের জীবনটা হয় একবারের জন্য, তাহলে আনন্দ না করার কোন কারণ নেই

এবং যতটা সম্ভব সুখী থাকার।

বোনাস পয়েন্ট যদি তুমি অন্য কারও জীবন ভালো করতে পারো।

আরও বোনাস পয়েন্ট যদি তুমি ছায়াপথে মানব সম্রাজ্য নির্মাণ করতে পারো।

এমন কাজ করো যা তোমার করতে ভালো লাগে।

তুমিই সিদ্ধান্ত নাও তোমার নিকট এই ভালো লাগার মানে কী।