ভিডিও
ট্রান্সক্রিপ্ট
তুমি যখন মারা গেলে তখন তুমি ঘরে ফেরার পথে ছিলে।
একটা সড়ক দুর্ঘটনা ছিল এটা।
অন্যগুলো থেকে তেমন একটা আলাদা না।
…তবে অবশ্যই মারাত্নক।
মৃত্যুটা যন্ত্রণাহীন ছিল।
চিকিৎসকরা বাঁচানোর যথাসাধ্য চেষ্ঠা করেছিল,
তবে লাভ হয় নি।
তোমার দেহটা এতটাই ক্ষত-বিক্ষত হয়েছিল যে,
… আমার মনে হয় সব শেষ হয়েই ভাল হয়েছে।
আর তখনই তোমার সাথে আমার দেখা হল।
“কি হয়েছে?”
“আমি কোথায়?”
“তুমি মারা গিয়েছ,” তোমাকে জানানোর জন্য বললাম।
রাখ-ঢাক করে যেহেতু লাভ নেই।
" একটা ট্রাক আসছিল…
…আর সেটা থামানোর জন্য খুব চেষ্ঠা করছিল।"
“হ্যা।”
“আমি…”
“আমি…আমি মারা গেলাম?”
“হ্যাঁ।”
“কিন্তু মন খারাপ করো না।”
“সবাই মারা যায়।”
তুমি চারপাশে তাকালে।
সেখানে শুধুই শূণ্যতা।
শুধু তুমি আর আমি।
“এটা কোন জায়গা?”
“এটা কি পরকাল?”
“অনেকটা তাই।”
“তুমি কি ঈশ্বর?”
“হ্যাঁ, আমি-ই ঈশ্বর।”
“আমার সন্তানেরা, আমার স্ত্রী…”
“ওদের নিয়ে কিছু বলতে চাও?”
“ওরা কি ঠিকঠাক থাকবে?”
“এটা ভালই লাগে আমার।” আমি বললাম,
“তুমি মাত্র মারা গিয়েছ আর তোমার প্রধান চিন্তা তোমার পরিবারকে নিয়ে।”
এটা আসলে খুব ভাল।
তুমি অবাক দৃষ্টিভরে আমার দিকে তাকালে।
তোমার কাছে আমাকে দেখতে ঈশ্বরের মত মনে হচ্ছিল না।
আমাকে কোন একটা লোক বা খুব সম্ভবত একটা মহিলার মত মনে হচ্ছিল।
হয়ত কিছুটা অস্পষ্ট প্রভু আকৃতির কেউ।
“চিন্তা করো না,” আমি বললাম। “ওরা ভাল থাকবে।”
“তোমার সন্তানেরা তোমাকে সবদিক থেকে খুব সুন্দর করে মনে রাখবে।
তোমার জন্য তখনো তাদের মনে কোন ঘৃণা জন্মায় নি।
তোমার স্ত্রী বাহির থেকে খুব কাঁদবে,
…তবে মনে মনে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলবে।
সত্যি বলতে, তোমার সংসার ভেঙ্গে যাচ্ছিল,
আর যদি এটাতে কিছুটা স্বান্তনা পাও যে,
… স্বস্তি অনুভব করার কারণে সে খুব দোষী অনুভব করবে।”
“ওহ…
তো এখন কি হবে?
আমি কি স্বর্গ বা নরকের মত কোথাও যাবো?”
“কোনটাই না, তোমার আবার পুনর্জন্ম হবে।”
“বাহ,”
“…তাহলে হিন্দুরাই ঠিক ছিল।”
“সব ধর্মই নিজেদের মত করে ঠিক।”
আমার সাথে হাটো।"
শূণ্যতার মধ্যে দিয়ে লম্বা লম্বা পা ফেলে আমরা এগিয়ে যেতে থাকলাম।
“কোথায় যাচ্ছি আমরা?”
“নির্দিষ্ট কোথাও না।
কথা বলতে বলতে হাটতে ভাল লাগে তাই হাটছি।
“তো, কি লাভ আসলে?
আমি যখন আবার জন্মাবো,
…আমি একদম একটা সাদা স্লেটের মত থাকব, তাই না?
একটা শিশু।
মানে, আমার সব অভিজ্ঞতা আর সবকিছু,
যা কিছু আমি এই জীবনে করেছি, সেগুলো আর কোন কাজে আসবে না?”
“তেমন না।
তোমার অতীতের জীবন গুলোর সব শিক্ষা আর অভিজ্ঞতা তোমার ভেতরে রয়েছে।
তুমি শুধু সেগুলো এই মুহূর্তে মনে করতে পারছো না।”
আমি হাটা থামিয়ে তোমার কাঁধে হাত রাখলাম।
তোমার ভেতরটা তোমার কল্পনার চাইতেও অনেক বেশি মহৎ, সুন্দর আর বিশাল।
একটা মানুষ তোমার বিশালতার খুব ক্ষুদ্র একটা অংশ কেবল নিজের ভেতর ধারণ করতে পারবে।
এটা অনেকটা একটা গ্লাসে আঙ্গুল ডুবিয়ে সেটা কি ঠান্ডা না গরম পরীক্ষা করার মত।
তোমার তোমার খুব অল্প একটা অংশ পাত্রে রাখো,
… এবং যখন তুমি সেটা উঠিয়ে আনো,
… তুমি সেটা সম্পর্কে সব কিছুই জেনে গেলে।
গত ৪৮ বছর ধরে তুমি একজন মানুষ ছিলে,
… তাই তুমি এখনো সেটা থেকে বেরিয়ে এসে তোমার বিশালতাটা অনুভব করতে পারছ না।
আমরা যদি এখানে বেশ কিছু সময় থাকি,
তুমি ধীরে ধীরে সব মনে করতে শুরু করবে।
কিন্তু প্রতিটা জীবনের মাঝে বার বার এটা করার কোন মানে হয় না।”
“তাহলে আমি এখন পর্যন্ত কতবার পূনর্জন্ম নিয়েছি?”
“ওহ, অনেকবার।”
অনেক অনেক,
…এবং অনেকগুলো ভিন্ন ভিন্ন জীবনে।
এইবার,
… তুমি ৫৪০ খ্রিস্টাব্দের একজন চাইনিজ কৃষিজীবী মেয়ে হবে।"
“দাঁড়াও, কি বললে?”
তুমি আমাকে অতীতে পাঠিয়ে দিচ্ছো?"
“হ্যা, অনেকটা তাই।
সময়টাকে তুমি যেভাবে দেখো এটা শুধু তোমার দুনিয়াতেই কাজ করে।
আমি যেখান থেকে এসেছি সেখানে সবকিছু আলাদা।”
“কোথায়…কোথা থেকে এসেছো তুমি?”
“ও হ্যা, আমি কোন একজায়গা থেকে এসেছি, অন্য কোথাও থেকে।
আর সেখানে আমার মত আরো অনেকে আছে।
আমি জানি যে তুমি জানতে চাও সেই জায়গাটা কেমন,
…কিন্তু সত্যি বলতে এটা তোমার বোধগম্য হবে না।
তুমি একটু হতাশ হয়ে বললে, “ওহ…"।
“কিন্তু দাড়াও।
আমি যদি বিভিন্ন সময়ে পূনর্জন্ম হয়ে থাকি,
… আমি হয়ত কোন এক সময়ে আমার নিজের সাথেই দেখা করেছি। "
“অবশ্যই, সবসময়ই হয় এমন।
এবং যেহেতু তারা দুইজন কেবল তাদের নিজেদের জীবনের গন্ডির ভেতর আবদ্ধ,
…তুমি বুঝতেও পারবে না যে এমন কিছু হচ্ছে।”
“তাহলে, এসবের মানে কি?”
আমি তোমার চোখে চোখ রাখলাম।
“এটাই জীবন,
…আমার এই মহাবিশ্ব সৃষ্টির পেছনে এটাই কারণ,
…যেন তুমি পরিণত হও।”
“মানে মানবজাতি, তুমি আমাদের পরিণত করে তুলতে চাও?”
“না, শুধু তুমি।
আমি তোমার জন্য এই পুরো মহাবিশ্ব তৈরী করেছি।
প্রতিটা জীবনে তুমি একটু একটু করে বড় হও আর পরিণত হও,
…আর একজন বিরাট ও মহান বুদ্ধিসত্ত্বা হয়ে উঠো।”
“শুধু আমি?
অন্যদের কি হবে তাহলে?”
“অন্য আর কেউ নেই।
এই মহাবিশ্বে শুধু তুমি আর আমি আছি।”
তুমি অপলক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে রইলে।
“কিন্তু পৃথিবীর সব মানুষ?”
“সব তুমি।
তোমার বিভিন্ন পুনর্জন্ম।”
“দাঁড়াও, আমি…
…সবাই?”
“এইতো তুমি ধরতে পারছো।”
“আজ পর্যন্ত যত মানুষ পৃথিবীতে এসেছে সবাই আমি?”
“হ্যা, অথবা যারা আসবে তারাও।”
“আমি আব্রাহাম লিংকন?”
“আর তুমি জন উইল্ক্স বুথও।”
“আমি হিটলার?”
…তুমি হতভম্ব হয়ে বললে।
“আর তুমিই সেই লাখ লাখ মানুষ যাদের সে হত্যা করেছে।”
“আমি যীশুখ্রিস্ট?”
“এবং তুমিই সবাই যারা তাকে অনুসরণ করত।”
তুমি চুপ হয়ে গেলে।
“যতবার তুমি কাওকে অত্যাচার করতে,
…তুমি নিজেকেই অত্যাচার করতে।
প্রত্যেকবার তুমি যতো দয়ালু কাজ করেছো,
…তুমি তোমার সাথেই করেছ।
পৃথিবীর সব মানুষ যতবার খুশি হয়েছে বা দুঃখ অনুভব করেছে
…সেগুলো সব তুমি অনুভব করেছো বা করবে।”
অনেকক্ষণ চিন্তা করলে তুমি।
“কেন?
এতকিছু কেন?”
“কারণ একদিন, তুমি আমার মত হয়ে উঠবে।
কারণ সেটাই তুমি।
তুমি আমার মতই একজন। তুমি আমার সন্তান!”
“ওয়াও!” তুমি অবিশ্বাসের সাথে বললে।
“মানে, আমি একজন ঈশ্বর?”
“না, এখনো না। তুমি এখনো ভ্রূণ অবস্থায় আছো,
এখনো বেড়ে উঠছো তুমি।
একবার যখন তুমি সব সময়ের সব মানুষের জীবনের মধ্য দিয়ে যাবে,
… তখনি তুমি ভূমিষ্ঠ হবার মত পরিণত হবে।”
“তারমানে এই পুরো মহাবিশ্ব…
এটা শুধু…”
“একটা ডিম!”, আমি উত্তর দিলাম।
“এখন তোমার সময় হয়েছে তোমার পরবর্তী জীবনে পদার্পণ করার।”
আর আমি তোমাকে তোমার পরবর্তী যাত্রায় পাঠিয়ে দিলাম।